নিষেধাজ্ঞার ১০ দিনেও সরকারি বরাদ্দের চাল পায়নি ১ লাখ ৭০ হাজার জেলে
আপডেট সময় :
২০২৫-০৩-১২ ২১:৩৬:৫১
নিষেধাজ্ঞার ১০ দিনেও সরকারি বরাদ্দের চাল পায়নি ১ লাখ ৭০ হাজার জেলে
আশিকুর রহমান শান্ত, ভোলা
ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে চলছে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারের ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ১০ দিন পার হয়ে গেলেও নিবন্ধিত ১ লাখ ৭০ হাজার ২৮৩ জন জেলের ভাগ্যে জোটেনি সরকারি বরাদ্দের চাল। এতে অভাব-অনটনে দিন কাটছে তাদের। চাল না পেয়ে কেউ কেউ সংসার ও এনজিওর কিস্তি চালাতে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদীতে নামছেন ইলিশ ধরতে।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া, ভেদুরিয়া, ইলিশা, শিবপুর, ভেলুমিয়া ও দৌলতখান উপজেলার চর মদনপুর সহ অভিযানের আওতায় থাকা প্রায় সকল ইউনিয়ন গুলোর মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মাছ ধরা পয়েন্টে জেলেদের মাছ শিকারের দৃশ্য দেখা যায়।
ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি মাছ ঘাট এলাকার জেলে মো. বশির মাঝি ও হেলাল মাঝি বলেন, ‘২ মাসের সরকারি নিষেধাজ্ঞার ১০ দিন হইয়া গেছে। এখনও আমরা সরকারি চাল পাইনাই। কাজ কাম নাই, সংসারে অনেক অভাব। রোজার মধ্যে অনেক কষ্ট পাইতেছি। আমাগো নামে সরকারি চাউলডা পাইলে অনেক উপকার হইতো।’
ভেলুমিয়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নদীর জেলে মোঃ আরিফ মাঝি ও ইলিশা মাছ ঘাট এলাকার জেলে আব্দুর রহিম মাঝি বলেন, ‘অভিযানের মধ্যে নদীতে মাছ ধরতে যাই না। জাইলা কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজও জানি না। তাই কোনো কাজ কাম নাই। সংসার চালাইতে কষ্ট হইতেছে। বাড়িতে স্ত্রী বাজার নিতে কয়, কিন্তু নিতে পারি না। পোলাপাইনরে কিছু কিনাও দিতে পারি না।’
এ সকল এলাকার রুবেল, জসিম, শেখ ফরিদ, জামাল, লিটন মাঝি সহ ২০/৩০ জন জেলে আরও বলেন, ‘আড়ৎদার থেকে টাকা ধার কইরা চাউল কিনছি। আরও ৫-৬ দিন খাইতে পারমু। সরকারি চাউল ডা যদি এরমইধ্যে পাই তাইলে অনেক উপরকার হইবো। আর না পাইলে আবারও ধার কইরা চাউল কিনতে হইবো।’
মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করা একাধিক জেলে নাম না প্রকাশ করা সত্তে বলেন, ‘অভিযানের এই কয়দিন আমরা নদীতে নামি নাই। এহনতো ঘরের চাউল কিনতে হইতো, সংসার চালাতে হইতো, এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করতে হইতো। এই কারণে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়া নদীতে যাইয়া মাছ ধরতেছি।’
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, প্রতিটি উপজেলায় দ্রুত জেলেদের মাঝে চাল বিতরণের জন্য যোগাযোগ করে যাচ্ছি। আশা করছি আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যেই ভোলার সাত উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে জেলেদের চাল বিতরণ শুরু হবে। এছাড়াও সাত উপজেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে নিষেধাজ্ঞা সফল করতে নিয়মিত অভিযান চলছে। তবে কোনো জেলে যদি অজুহাত দিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ শিকার করে তাহলে আমরা তাদের আটক করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি দেবো।
তিনি আরও জানান, ইলিশের অভয়াশ্রমের কারণের ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ শিকার ও বেচাকেনার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসময় জেলার সাত উপজেলায় নিবন্ধিত ১ লাখ ৭০ হাজার ২৮৩ জন জেলে থাকলেও এ বছর ৪০ কেজি করে ৮৯ হাজার ৬০০ জন জেলে এই সরকারের বরাদ্দকৃত চাল পাবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স